আপনি কি কখনো রক্ত দিয়েছেন? বা নিয়মিত রক্তদান বা এমন কি কখনো হয়েছে যে পরিবার বা কাছের কোন বন্ধুর রক্তের প্রয়োজন তাই ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্তের খোঁজ করছেন । বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন চিকিৎসায় বা অপারেশনের সময় রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয় আর তখনই ব্লাড ডোনার বা ব্লাড ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবসময় বলে আসছে, একজন ব্যক্তির রক্তদান করার সিদ্ধান্ত একটি জীবন বাঁচাতে পারে।
এমনকি যদি রক্তের উপাদান গুলোকে আলাদা করা হয় লোহিত কণিকা, প্লাটিলাইট এবং প্লাজমা এগুলো কোন রোগীর জন্য পৃথকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তার প্রয়োজন অনুযায়ী। অনেক সময় দেখা যায় রক্তের ঘাটতিতে রোগের মৃ*ত্যু হচ্ছেন। সে কারণে রক্তদানের বিষয়ে সব সময় উৎসাহিত করে আসছে রেডক্রস সহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়ে নানান কর্মসূচি পালিত হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশ আগের চাইতে এখন ব্লাড ডোনার খুজে পাওয়াটা সহজ হলেও জনসংখ্যার তুলনায় এখনো রক্তদাতা সংখ্যা খুব কম। তাদের মতে রক্তদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে ফলে এই নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনো কিছু ভুল ধারণা কাজ করে।
চিকিৎসকদের মতে প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী, পুরুষ চাইলেই নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত দিতে পারেন। তবে রক্তদান নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা কাজ করে। এমনকি বিশ্বজুড়ে রক্তদান নিয়ে কিছু রক্তদান নিয়ে যেসব মিথ প্রচলিত আছে। তার কয়েকটি আজ তুলে ধরা হলো।
রক্ত দিতে অনেক সময় লাগে
অনেকে মনে করেন রক্ত দিতে অনেক সময় লাগে কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করতে মাত্র ১ ঘন্টার মত সময় লাগে। রেজিস্ট্রেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এবং রক্তদান এই তিনটা ধাপ। রক্তদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান রক্ত দিতে আসা ব্যক্তির তাপমাত্রা, পালস, ব্লাড প্রেসার ও হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখে। আর রক্ত দিতে ৮ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না।
রক্ত দিতে ব্যাথা লাগে
কিছু সময়ের জন্য পিঁপড়ার কামড় এর মত অল্প একটু ব্যাথা লাগতে পারে সুচ ঢোকানোর সময়। এ ছাড়া আর কোন রকমের ব্যথার সম্ভাবনা নেই রক্ত দান করার ক্ষেত্রে। সুতরাং রক্ত দিলে ব্যথা লাগে এটা একেবারেই ভুল ধারণা। যারা নিয়মিত রক্তদান করে থাকেন তাদের অনেকের বক্তব্য তারা অনেক সময় বুঝতে পারেন না কখন সুচ ঢুকিয়ে রক্ত নিয়ে নেয়া হলো।
পরিবারের যে কেউ রক্তদান করতে পারবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন একটা সময় ধারণা ছিল পরিবারের সদস্যরাই রক্তদান করলে ভালো কিন্তু এখন এই ধারণা বদলেছে পরিবারের সদস্যদের রক্তদান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেক মানুষ রক্ত দেয়, সুতরাং আমি দিব না
এখন অনেকেই রক্ত দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন কিন্তু প্রয়োজনের সময় হয়তো তাদেরকে পাওয়া নাও যেতে। পারে সেক্ষেত্রে আপনার দেওয়া রক্ত হয়তো একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। সুতরাং রেয়ার ব্লাড গ্রুপ না হলেও রক্ত দেওয়া এড়িয়ে না যাওয়াই ভালো।
শরীরে ইনফেকশন হবে
শরীরে ইনফেকশন হবে অনেকের মাঝে এমন চিন্তাও আসে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যেভাবে যে সুঁচ দিয়ে রক্ত নেওয়া হয়, তাতে ইনফেকশনের কোন সম্ভাবনাই নেই।
রক্ত দিলে রক্ত কমে যাবে
রক্ত দিলে রক্ত কমে যাবে এটা একেবারেই ভুল ধারণা। সুস্থ মানুষ রক্ত দান করলে এর কোন প্রভাবে পড়ে না। দেহের ওজনের বিবেচনায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে ৫ লিটার রক্ত থাকে। প্রতিবার রক্তদানের সময় ৫০০ মিলিলিটার করে রক্ত নেওয়া হয়। রক্তদানের পর 24 থেকে 48 ঘন্টার মধ্যে নতুন রক্ত তৈরি হয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে।
রক্ত দেয়ার জন্য আমার বয়স বেশি
রক্ত দেয়ার কোন বয়স লাগে না। রেডক্রসের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ বছর বয়স থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করা যায় এবং কোনো শারীরিক সমস্যায় তৈরি না হলে আজীবন রক্ত দেওয়া সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ তাই রক্ত দেওয়া যাবে না
উচ্চ রক্তচাপ তাই রক্ত দেওয়া যাবে না। এটা সব সময় ঠিক নয় । কারোর সিস্টেমিক ব্লাড প্রেসার যদি ১৮০ মিলিলিটারের নিচে থাকে এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার যদি ১০০ মিলিলিটারের নিচে থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
ভেজিটারিয়ান তাই রক্ত দেয়া যাবে না
ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষাসীদের খাদ্যে আয়রন কম থাকে বলে মনে করা হয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত সুষোম খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে রক্তে আয়রন কম হবে না। তবে আপনার রক্তে যদি আয়রন সত্যিই কম থাকে তাহলে রোগীর নিরাপত্তার জন্য আপনাকে রক্ত দিতে দেওয়া হবে না।
বেশিরভাগ দেশে রক্তদানের আগে হিমোগ্লোবিন টেস্ট করা হয়। কারণ জেনে নেওয়া হয় রক্তদানকারী অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন কিনা।
আরো পড়ুন: চাঁদ কেন পৃথিবীর কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে?
ট্যাটু থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে না
কিছু কিছু দেশের রক্ত দেওয়া যায় ট্যাটু করার পরেও। যদি সেই ট্যাটু সরকারি নিয়ম নীতি মেনে চলা কোন দোকান বা সরকার অনুমোদিত কোন জায়গা থেকে করানো হয়। তবে সেটা না হলে আপনাকে রক্তদানের জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ট্যাটু করা থাকলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে রক্ত দেওয়া উচিত।
নিরাপদ ও সরকার অনুমোদিত কালি ও সুচ ব্যবহার করার আগে ইনফারেট ব্যবহার করে সুচ বিশুদ্ধ করলে ট্যাটু করার পরেই রক্তদান করা যাবে।
আমেরিকান রেডক্রস বলছে, যদি এমন কোন দেশ থেকে ট্যাটু করান, যেখানে ট্যাটু করার কোন ফেসিলিটি নেই। তাহলে ট্যাটু করার পর তিন মাস অপেক্ষা করুন।