পারমানবিক বোমার জনক ওপেনহাইমার এর জীবন কাহিনী। Atomic Bomb

হলিউডের নতুন সিনেমা ওপেনহাইমার নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পারমাণবিক বোমার জনক হিসেবে পরিচিত পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমার এর জীবনী নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমাটি। আর সে কারণেই বিজ্ঞানীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন করে আগ্রহ।

 

ওপেনহাইমার এর জন্ম এবং পরিবার

জার্মানি থেকে অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় আসা এক ইহুদি পরিবারে 1904 সালে জন্ম নেন ওপেনহাইমার। বিলাসিতার মধ্যে বড় হওয়া ওপেনহেইমার অত্যন্ত লাজুক হলেও ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান। খেলাধুলায় কোনও আগ্রহ না থাকলেও মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি গ্রিক ও লাতিন দর্শন করেছিলেন। আর আগ্রহী ছিলেন খনিজ পদার্থে।

 

ওপেনহাইমার এর পড়াশোনা

ওপেনহাইমার এর পড়াশোনা
ওপেনহাইমার এর পড়াশোনা

ওপেনহাইমার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে পড়েন। এরপর স্নাতকোত্তর করেন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে। তবে স্পর্শকাতর ও উদ্ধত ব্যক্তিত্ব এসময় তার জন্য নানা সমস্যার কারণ হয়। ল্যাবরেটরিতে কাজের আগ্রহ না থাকলেও শিক্ষকদের জোরাজুরিতে বিরক্ত হয়ে একদিন তিনি একটি আপেলের ভেতরের বিষাক্ত পদার্থ ভরে তার টিউটরের-ডেস্কে রেখে দেন।

সৌভাগ্যবশত টিউটর আপেলটি খাননি। কিন্তু ওপেনহাইমারের কেমব্রিজে পড়ার জন্য ঝুঁকির মুখে পড়ে। শেষে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার শর্তে কেমব্রিজে পড়ার অনুমতি পান তিনি।

পরের বছর এক বন্ধু তাঁর বান্ধবীর কাছে প্রেম নিবেদন করলে তাকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেন ওপেনহাইমার। মনোচিকিৎসকরা তাঁকে যে মানসিক সুস্থতা দিতে পারেনি, তা তিনি পরবর্তীকালে পেয়েছিলেন সাহিত্য থেকে। এমনটাই মনে করেন তাঁর জীবনীকাররা। এসময় থেকে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক বই পড়া তাঁর সারা জীবনের অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায়।

1940 সালে জীববিজ্ঞানী Katherine kitty হ্যারিসনকে বিয়ে করেন ওপেনহাইমার।

 

পরমাণু বোমা

পরমাণু বোমা
পরমাণু বোমা

পরমাণু অস্ত্রের হুমকি সম্পর্কে রাজনীতিবিদের আগে বিজ্ঞানীরা সচেতন হয়েছিলেন। 1939 সালে আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথম মার্কিন সরকারের নেতাদের কাছে এ নিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। প্রথম যখন বোমা তৈরির প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে ওপেনহেইমার নাম প্রস্তাব করা হয় তখন বেশ কিছু আপত্তি উঠেছিল। কিন্তু তাঁর জ্ঞান বিশ্বস্ততা ও উচ্চাভিলাষের কারণে ম্যানহাটন প্রকল্পে সামরিক নেতা জেনারেল Leslie Groves তাঁকে নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

 

শয়তানের কাজ বলে আখ্যা

যুদ্ধের পর পরমাণু বোমা সম্পর্কে ওপেনহাইমারের মত পাল্টে গিয়েছিল। তিনি একে ত্রাস ও আক্রমণের যন্ত্র এবং অস্ত্র নির্মাণ শিল্পকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেন। 1960 টের দশকে এক স্বাক্ষাৎকারে ওপেনহেইমার বলেছিলেন, বিস্ফোরণের পর পরই তাঁর মনে পড়েছিল হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতার একটি লাইন, “এখন আমি পরিণত হয়েছি সাক্ষাৎ মৃত্যুতে, বিশ্ব ধ্বংসকারীতে”

 

President Harry S. Truman
President Harry S. Truman

মার্কিন প্রেসিডেন্ট Harry S. Truman কে 1945 সালের অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, আমার মনে হয় যেন আমার হাতে রক্ত লেগে আছে। প্রেসিডেন্ট পরে বলেছিলেন, আমি ওঁকে বলেছিলাম, রক্ত লেগেছে আমার হাতে। ওটা নিয়ে আমাকে ভাবতে দাও।

অস্ত্র তৈরির সময়ে ওপেনহাইমার তাঁর সহকর্মীদের বলতেন, পরমাণু বোমা ব্যবহৃত হলে কী হবে তা বিজ্ঞানীদের বিষয় নয়। তাঁদের দায়িত্ব, তাদের কাজ করা। কিন্তু যুদ্ধের পর ওপেনহাইমারের নিজের যুক্তির উপর আস্থা নড়ে গিয়েছিল। পরে আরও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। এ কারণে 1954 সালে তার বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার তদন্ত করে এবং তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স কেড়ে নেয়

1963 সালে তাকে Enrico Fermi পুরস্কার দেওয়া হলেও ক্লিয়ারেন্স ফেরত দেওয়া হয় তার মৃত্যুর 55 বছর পরে। ওপেনহাইমার তাঁর বাকি জীবনে একদিকে তাঁর কাজ নিয়ে গর্ব, অন্যদিকে পরিণাম নিয়ে অপরাধবোধে ভুগছেন।

তরুণ বয়স থেকেই অত্যধিক ধূমপান করতেন ওপেনহাইমার। এ কারণে তার কয়েক দফা যক্ষা হয়। 1967 সালে তিনি গলার ক্যান্সারে মা*রা যান। তিনি বলেছিলেন, “একই ভুল পুনরায় না করাই হচ্ছে বিজ্ঞানের কাজ। এটা কবিতা নয়।”

 

Disclaimer

The information in this article, sourced from Wikipedia and other online resources, is provided “as is”. While attempts have been made to verify accuracy and provide source links, overlap or inaccuracies from the original sources may occur.

Always cross-reference for validity. Read Our DMCA.

Leave a Comment