পদার্থবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের পরিপুরক। পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব পদার্থবিজ্ঞান হতে লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৌশলীগণ তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে মানব সভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নতির শিখরে।
উদাহরণস্বরূপ-
(ক) ফ্যারাডের তড়িৎ চৌম্বক আবেশের সূত্রগুলো আবিষ্কারের ফলে প্রকৌশলীগণ উক্ত সূত্রগুলো কাজে লাগিয়ে তড়িৎ জেনারেটর, তড়িৎ মোটর, ট্রান্সফর্মারের মতো যন্ত্র আবিষ্কার সম্ভব করেছেন।
(খ) তাপগতিবিদ্যার সূত্রগুলো আবিষ্কারের ফলে প্রকৌশলশাস্ত্রে তাপ ইঞ্জিন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।
(গ) তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ, ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum tube) এবং অর্ধপরিবাহী আবিষ্কারের ফলে প্রকৌশলশাস্ত্রে তারহীন যোগাযোগ (Wireless communication), রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে।
(ঘ) নিউক্লিয়ার ফিশন (Nuclear fission)-কে কাজে লাগিয়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন এবং অনেক বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
(ঙ) অপটিক্যাল ফাইবার ও কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ ও সম্প্রচার ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
নিম্নে পদার্থবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো-
পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্র
পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলো গাণিতিক ধারণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উন্নয়নে গণিতশাস্ত্র শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে আসছে। যেমন— ধরা যাক দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষ বল এদের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এ কথাটিকে গণিতের সাহায্যে সহজে লেখা যায়—
দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষ বল নির্ণয়ের উপরিউক্ত সমীকরণটি যোগজীকরণ ক্যালকুলাস ব্যবহার করে প্রতিপাদন করতে পারি ।
পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্র
পরমাণুর গঠন, তেজষ্ক্রিয়তা, এক্স-রে বর্তমান রসায়নে বিপ্লব এনেছে। রসায়নের শাখা ভৌত রসায়ন, কোয়ান্টাম রসায়ন ইত্যাদি পদার্থবিজ্ঞানের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব, সূত্র ও নীতি এগুলোর অধ্যয়নকে সহজ করে দিয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান
জীববিদ্যায় পদার্থবিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন জীবদেহে শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়া যেমন— ব্যাপন, অসমোসিস ইত্যাদি পদার্থবিজ্ঞানের নীতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করা যায়। বিভিন্ন ঘটনা যেমন- • আকৃতি, গতিশীল, ও প্রাণিসত্তার সঞ্চালন পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের গঠন দেখাকে সম্ভব করেছে।
পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা
দূরবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে জানতে সহায়তা করেছে। টেলিস্কোপ সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ সম্পর্কে জানতে সমর্থ করেছে। রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে কোয়াসার, পালসার ইত্যাদি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখা
সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ব্রাশ করা, গোসল করা, রান্না করা, খাওয়া, কলেজে যাওয়া, বাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করা, ঘড়ি দেখা, মোবাইলে কথা বলা, টিভিতে খবর শোনা সবই প্রযুক্তি। এ ছাড়া কৃষকের জমি চাষ করে ফসল ফলানো, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় নানারকমের প্রযুক্তি।
প্রযুক্তি সাধারণত সাধারণ বিজ্ঞান বা পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, পদার্থবিজ্ঞান প্রযুক্তির জগতে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসামান্য অবদান রেখেছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। রোগ নির্ণয়ে পদার্থবিজ্ঞানের উদ্ভাবিত নানাবিধ যন্ত্র সঠিক রোগ নির্ণয়ে দীর্ঘদিন অবদান রেখে চলছে। যেমন- এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি, এন্ডোস্কোপি.
আরো পড়ুন: কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী বলের সংজ্ঞা (Definition of centripetal and centrifugal force)
কৃষিবিজ্ঞান
কৃষিবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। কৃষি প্রযুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এলো দুটি কারণে-একটি হলো উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন কীভাবে উদ্ভিদ সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিয়ে এবং মাটি, পানি ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয়, উপাদান নিয়ে খাদ্য উৎপাদন করে আর অন্যটি হলো নতুন সব কৃষিযন্ত্রের উদ্ভাবন ও কৃষিকাজের যান্ত্রিকীকরণ।
উদ্ভাবিত সকল যন্ত্রপাতি পদার্থবিজ্ঞানের অবদান। পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও সূত্রের উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবনে জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং আণবিক জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা করা হয়।